উম্মতে মুহাম্মদী: এক যোদ্ধা জাতির ইতিহাস -এর দ্বিতীয় পর্বে নবী মুহাম্মদ সঃ এবং তার সাহাবীদের প্রতি কোরায়েশ নেতাদের নির্যাতনের গভীর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কিভাবে অভিজাত ও দাস শ্রেণির সাহাবীরা ইসলাম গ্রহণের পর কোরায়েশদের অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন এবং তাদের ওপর নেমে আসা কঠিন পরীক্ষার সময়গুলো কেমন ছিল, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই পর্বে।
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: কোরায়েশ নেতারা আবু তালিবের কাছে প্রস্তাব দেয়, তারা নবী মুহাম্মদ (সঃ)-কে ধন-সম্পদ দিয়ে ইসলামের প্রচার বন্ধ করতে রাজি। কিন্তু নবী মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর আদেশ পালনে অবিচল ছিলেন। আবু তালিব কোরায়েশদের জানিয়ে দেন, তার ভাতিজা কোনো কিছুতেই ইসলামের প্রচার থামাবেন না। কোরায়েশ নেতারা পরে একটি বৈঠক ডেকে আবু জাহেলের নেতৃত্বে বনু হাশিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু ওমর ইবনুল খাত্তাবসহ বেশিরভাগ নেতারা এর বিরোধিতা করেন।
এই সময় উতবা ইবনে রাবিয়ার ছেলে আবু হুজায়ফা তার ক্রীতদাস সালিমকে মুক্ত করে, যা কোরায়েশদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। উতবা এ নিয়ে বিরক্ত হলেও সালিমকে নিজের নাতি হিসেবে মেনে নেয়। কিন্তু কিছুদিন পরে সে আবু হুজায়ফাকে ইসলাম গ্রহণ করতে দেখে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় এবং তাকে পূর্বপুরুষের ধর্মে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়, যা আবু হুজায়ফা প্রত্যাখ্যান করেন। এর ফলে পরিবারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, কোরায়েশ নেতারা নবী মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার চালায়, কিন্তু তাতে যুবকদের মধ্যে ইসলামের জনপ্রিয়তা কমেনি। মক্কার দাস ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষেরাও ইসলামের সমানাধিকারের বার্তা শুনে আকৃষ্ট হয়। কোরায়েশ নেতারা বিচলিত হয়ে নিজেদের মধ্যে পুনরায় আলোচনা করে।
উতবা ইবনে রাবিয়া কোরায়েশ নেতাদের কাছে নবী মুহাম্মদ (সঃ)-এর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণের পরিবর্তে অন্যপন্থা অনুসরণের পরামর্শ দেয়। তার ছেলে আবু হুজায়ফা এই পরামর্শকে সমর্থন করে, যা নিয়ে আবু জাহেলের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরে, কোরায়েশরা আবু হুজায়ফার পরিবারের সদস্যদের ধরতে এবং তাদের ইসলাম থেকে ফেরানোর চেষ্টা করে।
এই সময়ে, আল ওয়ালিদের পুত্র, ওমরের ভাই, এবং আরও অনেক অভিজাত পরিবারের লোকজন গোপনে ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন। কোরায়েশরা তাদের ঘরবন্দি করে এবং দাসদের উপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে। বিশেষ করে আবু জাহেল এবং উমাইয়া ইবনে খালফ দরিদ্র মুসলমানদের উপর নির্যাতনে শীর্ষে ছিল।
নবী মুহাম্মদ (সঃ)-এর অভিজাত সাহাবীরা নিরাপদ থাকলেও তাদের হৃদয় এই নির্যাতনের দৃশ্যে ক্ষতবিক্ষত হয়। এভাবেই কোরায়েশদের বিরোধিতা সত্ত্বেও ইসলামের প্রচার অব্যাহত থাকে, এবং নবী মুহাম্মদ (সঃ)-এর সাহাবীরা নতুন ইতিহাসের সূচনা করেন।