উম্মতে মুহাম্মদী: এক যোদ্ধা জাতির ইতিহাস । পর্ব-১ : এই পর্বে জানুন আরবের প্রাচীন সমাজ, তাদের পৌত্তলিকতা এবং বাদশা আব্রাহার হস্তিবাহিনীর কাবা ধ্বংসের প্রচেষ্টা। আব্দুল মুত্তালিবের নেতৃত্বে কাবার রক্ষা এবং মক্কার সংস্কৃতি ও নেতৃত্বের বিকাশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। ‘উম্মতে মুহাম্মদী’ সিরিজের এই প্রথম পর্বে, আমরা উম্মতে মুহাম্মদীর ইতিহাসের সূচনা ও তাদের ঐতিহ্যকে বিশ্লেষণ করবো।
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: আরব ছিল এক অনুর্বর ভূমি, যেখানে শত শত মাইল বিস্তৃত মরুভূমির মাঝে সবুজের দেখা মিলত খুব সামান্য। এখানে বাস করা মানুষগুলোর একটি বড় অংশই ছিল মরুচারী বেদুইন, যারা ছিলেন ঘরবাড়িহীন। যাদের নিজেদের শহর কিংবা গ্রাম ছিল, তারাও তেমন উন্নত ছিল না। অনাবৃষ্টি এবং অনুর্বর জমি এই জাতিকে এক ক্ষুধার্ত জনপদে পরিণত করেছিল।
এছাড়া, আরবদের পিছিয়ে পড়ার আরেকটি বড় কারণ ছিল তাদের মধ্যে গোত্রীয় বিভাজন। নিজেদের গোত্রের প্রতি ভালোবাসা ছিল অন্ধ, কিন্তু অপর গোত্রের প্রতি ছিল প্রচণ্ড বিদ্বেষ। গোত্রে গোত্রে বিরোধ সৃষ্টি হলে তা যুগ যুগ ধরে চলতে থাকত। এমনকি, এক প্রজন্ম প্রতিশোধ নিতে ব্যর্থ হলে পরের প্রজন্ম সেই দায়িত্ব নিত।
তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি ছিল পারস্য ও রোম সাম্রাজ্য, কিন্তু তাদের মধ্যে আরবভূমির প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। কারণ, আরবদের না ছিল সম্পদ, না ছিল সভ্যতা।
সে সময় পুরো আরব আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল পৌত্তলিকতায়। মক্কার কোরায়েশ গোত্র ছিল মূর্তিপুজারীদের ধর্মীয় নেতৃত্বের ধারক। তাদের অধীনে ছিল কাবা, একটি প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা। কাবার প্রতি আরবদের দুর্বলতা ছিল প্রাচীনকাল থেকে। তবে ৪০ বছর আগে একটি ঘটনার কারণে কাবার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা বেড়ে যায়।
বাদশা আব্রাহা আবিসিনিয়া থেকে বিশাল এক হস্তিবাহিনী নিয়ে কাবা ধ্বংস করতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু মক্কাবাসী পালাতে শুরু করে। তখন আব্দুল মুত্তালিব, যিনি কাবার মুতোয়াল্লি ছিলেন, মহান প্রভুকে স্মরণ করেন। একসময় আকাশে আবাবিল পাখির আগমন ঘটে, যা কাবাকে রক্ষা করে আব্রাহার বাহিনীকে পরাস্ত করে।
এভাবেই ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয়, যা কাবাকে আরবের তীর্থস্থানে পরিণত করে। ফলে মক্কা হয়ে ওঠে আরবের প্রাণকেন্দ্র এবং কোরায়েশরা তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।