ব্যক্তিগত সমস্যা কি অফিসের বসকে জানাবেন?
নিউজ ডেস্ক:
কয়েকদিন ধরেই কিছু সমস্যা আপনি ভুগছেন। সমস্যাগুলো ক্রমেই আপনাকে প্রভাবিত করছে। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। পারিবারিক কলহ, শারীরিক বা মানসিক সমস্যা ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছেন কিছু কাউকে কিছু বলতে পারছেন না।
এই সমস্যাগুলো আপনাকে সবচেয়ে প্রভাবিত করছে অফিসে কাজের সময়। আপনি ঠিক মতো অফিসের কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না। ফলে অফিসের কিছু কাজে ভুল হয়ে যাচ্ছে, যা অফিসের জন্য মারাত্মকও হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছেন আপনার বসকে আপনার সমস্যগুলো খুলে বলবেন। কিন্তু মনের মধ্যে শঙ্কা ‘এগুলো বলা কি ঠিক হবে?’
আপনি হয়তো একটি চিন্তা করছেন বলবেনই কিন্তু সমস্যাটি আপনার কাজ সংক্রান্ত কিনা বা এটা কী ধরনের আলোচনা হতে পারে, আপনার বসের ব্যক্তিত্ব কেমন এবং সে আপনাকে আদৌ সাহায্য করতে পারবেন কিনা। সব ধরনের সমস্যার কথা কর্মক্ষেত্রে বলার উপযোগী নয়। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলা আপনার এবং আপনার বসের জন্য ভালোও হতে পারে। আসুন এমন কিছু সমস্যঅ নিয়ে আলোচনা করা যাক:
কর্মক্ষেত্রে কি আপনার কিছু দরকার?
অবস্থানগত কারণেও আপনার কাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে। একটু আলাদা ব্যক্তিগত জায়গা দরকার যাতে করে আপনি আপনার চারপাশের ভিড় এড়াতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে কোনো কিছু দরকার হলে বা ব্যক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হলে অবশ্যই ম্যানেজারকে বলা উচিত। কিন্তু আপনি ঠিক জানেন তো যে বসকে আসলে কী বলতে চাইছেন। তাই কোনো কিছু দরকারি হোক বা অনুরোধ, বলার আগেই ভালো করে চিন্তা করে নিন।
তবে এক্ষেত্রে আপনাকে আগে ভাবতে হবে। আপনি যদি ঠিকভাবে বলতে বা বোঝাতে না পারেন যে আপনার কী দরকার তাহলে আপনি এই বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। আপনি চাইলেই তাকে কাজের বন্ধু মনে করে সবকিছু বলতে পারেন না।
বস কি আসলেই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে?
আপনার সমস্যার ধরনটা ভাবুন, এটা কি আপনার বসে পক্ষে সমাধান করা সম্ভব কিনা। মনে করুন, আপনি অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনার ব্যক্তিগত সমস্যার ব্যাপারে বসের সাথে কথা বলবেন। কিন্তু এটা ভেবে দেখেছেন কী যে, আসলেই আপনার বস আপনাকে এই ব্যাপারে কোনো ধরনের সাহায্য করতে পারবেন কি না। আপনার বস কী চাইলেই আপনার কাজের চাপ কমিয়ে দিতে পারেন বা সাময়িকভাবে আপনার কিছু কাজ অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারেন, তাহলে বসকে আপনার অসুবিধার কথাগুলো বলতে পারেন।
তবে এমন কোনো কিছুর পিছনে সময় নষ্ট করবেন না, যেটা আপনি জানেন যে তারা দিতে পারবে না কিন্তু আপনি চাইছেন। যদি আপনার বসের আপনার সমস্যা সমাধান বা সহজ করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে আপনার বসকে সমস্যার কথা বলাটা কার্যকরী হবে না।
ব্যক্তিগত সমস্যা আপনার কাজকে প্রভাবিত করছে কি?
ভালো কাজে জন্য আবশ্যক ভালো বস। একজন ভালো বস তার টিমকে কাজে মনোযোগী করে তুলতে সাহায্য করে। সমস্যাগুলো তারা নিজে থেকেও জানার চেষ্টা করে। যদি তারা কারণগুলো না জানেন তাহলে ভাববেন হয় আপনি কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন অথবা আপনি আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বা আপনার উদ্দেশ্য ঠিক নয়। তাদের টিমকে ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য কাজের বাইরে অন্য কি চলছে তা তাদের জেনে রাখা ভালো।
তবে সমস্যাগুলো যদি পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে আপনার প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় তাহলে আপনার উচিত হবে তা নিয়ে কথা বলা। এই ধরনের সমস্যা নিয়ে কথা বললে আপনার ম্যানেজার নিজেও চিন্তা করবেন যে, আপনি আপনার কাজের প্রতি মনোযোগী এবং কাজের কোনো প্রকার ব্যাঘাত চান না। আরো ভালো হয় যদি আপনি এই সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো পরিকল্পনা করতে থাকেন।
তবে যদি সকল সমস্যার মধ্যেও আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন তাহলে ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো বসকে জানানোর দরকার পড়ে না।
আপনার বস আসলে কী পছন্দ করেন?
একেক বস একক ধরনের হয়। সবাই সব বিষয়ে নাগ গলায় না। কিছু বস তার অধীনস্থ কর্মকর্তা বা কর্মচারীর ব্যক্তিগত সমস্যাকে তেমন গুরুত্ব দেন না। আবার অনেকেই দিয়ে থাকেন।
তাই আপনার বস কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সমস্যাকে তার কাজের সাথে তুলনা না করে শুধু তার কাজকে মূল্যায়ন করে তাহলে সমস্যার কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। এর আগে আপনি আপনার বসের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার দরকার। কারণ, যে ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো কিছুটা হলেও জেনে নেওয়া ভালো। কারণ যিনি নিজেই অনেক সমস্যার মধ্যে আছেন তিনি নিজে আপনার সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
বিশ্বস্ততা ও আস্থা কতখানি?
যেকোনো ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করার আগে নিজে যাচাই করুন আপনি নিজে তাকে কতখানি বিশ্বাস করেন এবং সে আপনাকে কতখানি বিশ্বাস করে, বিশেষ করে আপনার কলিগদের ক্ষেত্রে। অবশ্যই বিশ্বাসী কাউকে নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলবেন তা না হলে আপনার সমস্যা তার কাছে হাস্যকর মনে হবে অথবা তার গল্প করার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তবে কলিগদেরকে কোনো কিছু বলার থেকে সরাসরি নিজের বসকে বলা ভালো। কারণ আপনার বস আপনার সমস্যার ব্যাপারে যদি অন্য কোনো মানুষের থেকে জানতে পারেন তাহলে সেটা একটি অফিস কর্মক্ষেত্রের জন্য ভালো হবে না। তার চেয়ে আপনি সরাসরি আপনার বসকেই সমস্যার কথা খুলে বলুন। অন্যথায় আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা সারা অফিসের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠবে। এই ধরনের কিছু হওয়ার থেকে নিজের কথা নিজের মধ্যে রাখাই ভালো হবে।
কতটুকু কথা শেয়ার করবেন?
মনে করুন সকল চিন্তা ভাবনার পর আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে বসের সাথে কথা বলবেন। কিন্তু ঠিক কতটুকু সমস্যার কথা বলবেন সেটা ঠিক করেছেন কি? মূলত আপনি বসকে কতটুকু কথা বলবেন সেটা নির্ভর করে আপনাদের সম্পর্কের ওপর।
সর্বশেষ
অনেক সময় অফিসের বসকে ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলার দরকার হয়। এতে করে কাজের ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার- পরিবেশ ঠিক আছে কি, সম্পর্ক কেমন, কতটা বিশ্বাসী। আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার যে, বস বা ম্যানেজারকে সমস্যার কথা বলার মূল কারণ এর মাধ্যমে যাতে একটি সাময়িক সমাধান পাওয়া যায়। আপনি মাথায় দুশ্চিন্তা নিয়ে তো আর অফিসের কাজ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে অফিস কর্তৃপক্ষকে কিছুটা সহনশীল হওয়া দরকার।